Ads

ফ্রিলান্সিং থেকে যদি এত আয় করা যায় তাহলে দেশে এত বেকার কেন?

ফ্রিলান্সিং থেকে যদি এত আয় করা যায় তাহলে দেশে এত বেকার কেন?

বাংলাদেশে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা, যার ফলে দেশের অনেক যুবক ও যুবতী কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁজছে। এই প্রেক্ষিতে ফ্রিলান্সিং একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছে।

তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ফ্রিলান্সিং থেকে যদি এত আয় করা সম্ভব হয়, তাহলে দেশে বেকারত্বের হার এত বেশি কেন? চলুন এই প্রশ্নের কিছু কারণ বিশ্লেষণ করি।

১. সচেতনতার অভাব

ফ্রিলান্সিং সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। যদিও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা অনেকটা বেড়েছে, তবে গ্রামাঞ্চলে এখনও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত। অনেকেই জানেন না কীভাবে ফ্রিলান্সিং শুরু করতে হয়, কোন প্ল্যাটফর্মে কাজ পাওয়া যায়, বা কীভাবে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হয়।

২. প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব

ফ্রিলান্সিংয়ে সফল হতে হলে কিছু প্রযুক্তিগত দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। যেমন: ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি। তবে দেশের অনেক যুবক-যুবতী এই ধরনের দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে আছেন। প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাবের কারণে তারা ফ্রিলান্সিংয়ের সাথে পরিচিত হতে পারছে না।

৩. ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা

অনেক ফ্রিলান্সিং কাজ ইংরেজিতে করা হয়। তবে দেশের অনেক যুবক-যুবতী ইংরেজিতে দুর্বল। ভাষাগত দক্ষতার অভাবে তারা আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে প্রতিযোগিতা করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

৪. আর্থিক সীমাবদ্ধতা

ফ্রিলান্সিং শুরু করার জন্য একটি ভালো কম্পিউটার ও উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন। দেশের অনেক যুবক-যুবতী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাদের পক্ষে এই খরচ বহন করা সম্ভব হয় না।

৫. স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তার অভাব

ফ্রিলান্সিং কাজের স্থায়িত্ব কম। যে কোন সময় কাজ হারানোর আশঙ্কা থাকে। অনেকেই নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা চান, যা ফ্রিলান্সিংয়ে পাওয়া কঠিন। এই কারণে অনেকেই ফ্রিলান্সিংয়ে ঝুঁকি নিতে চান না।

৬. পারিবারিক ও সামাজিক চাপ

ফ্রিলান্সিং এখনও অনেক পরিবার ও সমাজে স্বীকৃত পেশা হিসেবে বিবেচিত হয় না। অনেক অভিভাবক মনে করেন, ফ্রিলান্সিংয়ে স্থায়িত্ব নেই এবং এর মাধ্যমে সুনাম অর্জন করা কঠিন। ফলে পারিবারিক ও সামাজিক চাপের কারণে অনেকেই এই পথে আসতে পারেন না।

৭. মার্কেটিং ও নেটওয়ার্কিংয়ের অভাব

ফ্রিলান্সিংয়ে সফল হতে হলে নিজেকে মার্কেট করতে হয়। ভালো কাজ করতে পারলেও, সঠিক মার্কেটিং ও নেটওয়ার্কিংয়ের অভাবে অনেক ফ্রিলান্সার কাজ পেতে ব্যর্থ হন।

উপসংহার

ফ্রিলান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করা সম্ভব হলেও, দেশের বেকারত্ব কমাতে এটি একমাত্র সমাধান নয়। ফ্রিলান্সিংকে জনপ্রিয় ও সহজলভ্য করতে হলে প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান। এর পাশাপাশি সমাজ ও পরিবারকে ফ্রিলান্সিং সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দিতে হবে। তবেই ফ্রিলান্সিং একটি কার্যকরী পেশা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে এবং দেশের বেকারত্ব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url